এবিএনএ: চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রবৃদ্ধি বাড়ার ক্ষেত্রে শিল্পের প্রবৃদ্ধি মূলচালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৯ প্রকাশ করেন কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ।গত ১৯ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছাড়াবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর এডিবি তার আউটলুক প্রকাশ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কথা জানাল।
মনমোহন প্রকাশ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুতগামী। রেমিট্যান্সের প্রভাবে ব্যক্তি খাতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে সরকারের বাড়তি বিনিয়োগের কারণেই প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ধরে রাখতে আগামীতে শিল্পের ভিত্তি বাড়াতে হবে। বৈচিত্র্য আনতে হবে রফতানি পণ্যে। ব্যক্তি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। করের ভিত্তি বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তি খাতের চাহিদা মেটাতে মানবসম্পদেও উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের সংস্কারেও গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানান মনমোহন প্রকাশ। সংস্থাটি মনে করে, নির্বাচন-পরবর্তী স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা সারা বছরই এমন থাকবে। একই সঙ্গে উচ্চ রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারা ও প্রবাসী আয়ের গতিও বেগবান হবে।
চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে যানবাহন, শিক্ষা, আর্থিক খাত ও স্বাস্থ্য খাতের ধীরগতির কারণে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ততটা এগোবে না, যা থাকতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশের আশপাশে। এডিবির মতে, রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ শতাংশে। মূলত পোশাক খাতে রফতানির ওপর ভর করেই এ প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে। এডিবির মনে করে, গেল অর্থবছরে, দেশে বিপুল পরিমাণে পণ্য আমদানি হলেও ১০ শতাংশের মধ্যেই থাকবে। মূলত খাদ্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কম থাকায় ২০১৯-২০ অর্থবছরেও দেশে আমদানির পরিমাণ কমবে।
এডিবির মতে, চলতি অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় বাড়বে ১১ শতাংশ হারে। তবে এর পরের অর্থবছরে তা একই ধারায় না থেকে নেমে আসবে ১০ শতাংশের ঘরে। তবে টেকসই উন্নয়নের এ ধারায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও দেখছে উন্নয়ন সহযোগী এ সংস্থা। এর মধ্যে আছে- ব্যাংক খাতে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ ও দুর্বল শাসনব্যবস্থা। বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা আগামীতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করে এডিবি। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার বেশি। বিনিয়োগের তুলনায় লাভের হার কম। এখানে সুশাসনব্যবস্থাও দুর্বল। এর ফলে বাড়ছে মূলধন ঘাটতির প্রবণতা।
ব্যাংকিং খাতে পরিচালনায় ও আইনি কাঠামোয় বড় ধরনের অদক্ষতা রয়েছে বলেও মনে করে এডিবি। এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতায় নেয়া আগের অনেক উদ্যোগ সফল হয়নি। ব্যাংক আইন সংশোধন, ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা ও ঋণের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইনে কিছুটা সফলতা এসেছে। উন্নতি ধরে রাখতে আগামীতে বিদ্যমান ব্যাংক আইনের কঠোর প্রয়োগ চেয়েছে এডিবি। এ ছাড়া কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ঋণের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা যাচাই করা, সরকারি ব্যাংকে একীভূতকরণের মতো উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে এডিবির প্রতিবেদনে।